হ্যাটট্রিক জয়ের আশায় নামছে আওয়ামী লীগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের লক্ষ্যে মাঠ গোছাতে তোড়জোড় শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলায় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি বিতর্কিত ও পরগাছাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। ২ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান জোরদার করা হবে। এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলা ও উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সম্পন্ন করে দলকে চাঙ্গা করা হবে। সর্বোপরি ভোটার আকর্ষণে সরকারের উন্নয়নগুলো সঠিকভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। আগামীকাল খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তৃণমূলে থাকবে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রমতে, ইতিমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে ধরে নিয়েই মাঠ গোছাতে শুরু করেছে তারা। এর অংশ হিসেবে আজ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিকাল ৫টায় গণভবনে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের বৈঠকে স্থির হবে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার কৌশল, মনোনয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া, সরকারের উন্নয়নগুলো প্রচারসহ নানা দিক।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, যেসব জেলায় এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে। জেলা-উপজেলায় যেখানেই কোন্দল রয়েছে, তা নিরসন করা হবে। অনেক উপজেলায় দীর্ঘদিন আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে দল পরিচালিত হচ্ছে। সেগুলোয় সম্মেলন করারও একটা পরিকল্পনা রয়েছে। এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। দলের নির্দেশনার পর অনেক এমপি এখন এলাকামুখী। যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। সরব হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। করছেন এলাকার উন্নয়ন প্রচার। দলের নীতিনির্ধারকরা জানান, এজন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাই হবে প্রথম কাজ। আগামীতে সংসদ নির্বাচনে তরুণদের একটি বড় অংশ জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। এই তরুণদের দলের সদস্য করার টার্গেট করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। যেসব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা শাখা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের স্থায়ী ঠিকানা নেই এবং যেসব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা শাখার নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণ করা হয়নি তাদের তথ্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী প্রবীণ ও অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন, এ ধরনের নেতা-কর্মীর তালিকা করে সভানেত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এতে দলের প্রবীণ নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হলে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ আরও বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী হবে। কারণ হাইব্রিডদের চোটপাট দেখে অনেক প্রবীণ নেতা-কর্মী দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর মাধ্যমে তৃণমূল আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আমলে গত আট বছরে বিএনপি-জামায়াতের লক্ষাধিক নেতা-কর্মী দলে ঢুকেছেন। এদের অনেকেই দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত এসব নেতার সদস্যপদ আর নবায়ন করা হবে না। এ প্রসঙ্গে গতকাল ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনে ঢুকে পড়া বিএনপি-জামায়াতদের বাছাইকাজ চলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ান। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করুন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব। ’ দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত আট বছরে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের এই আট বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে গত ২৮ বছরেও কেউ এত উন্নয়ন করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে, শান্তির পক্ষে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। কাজেই উন্নয়নের জন্যই একাদশ নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবেন। ’ খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আগামী রবিবার খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মাধ্যমেই উন্নয়নের বার্তা নিয়ে আমরা জনসভা, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক করব। জনগণের সামনে আওয়ামী লীগ সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়নগুলো তুলে ধরব। দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে মানুষের ভোটের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো দলকে ক্ষমতায় আনতে কাজ করব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর